সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৯ অপরাহ্ন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মারের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। এসময় উভয়ের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
রবিবার (৯ নভেম্বর) বেলা ২টার দিকে রেজিস্ট্রারের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের সঙ্গে রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতাকর্মীদের সৌজন্য সাক্ষাৎ চলছিল বলে জানা গেছে।
এক ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, সালাহউদ্দিন আম্মার রেজিস্ট্রারকে উদ্দেশ করে বলেন, “আমি স্যার, ভিতরে আসব না?” তখন রেজিস্ট্রার বলেন, “তোমাকে আমি বাইরে ১০ মিনিট ওয়েট করতে বলেছি।” এরপর আম্মার বলেন, “আপনি স্যার চিঠি (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সভাপতি অপসারণের চিঠি) আটকে রাখছেন।”
তখন রেজিস্ট্রার উত্তরে বলেন, “এই বেয়াদব ছেলে, কীসের চিঠি আটকায় রাখছি আমি?” আম্মার বলেন, “বেয়াদব তো আমি। ডেফিনেটলি বেয়াদব।”
রেজিস্ট্রার তখন বলেন, “আমার সঙ্গে বেয়াদবি কেন? তুমি কে ওই ডিপার্টমেন্টের?” আম্মার জবাব দেন, “আমি কে মানে? আমি রাকসুর নির্বাচিত জিএস।”
আম্মারের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে রেজিস্ট্রার প্রশ্ন করেন, “তোমরা কারা?” তারা বলেন, “আমরা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।” তখন রেজিস্ট্রার বলেন, “তোমরা আসো।” এসময় আম্মার বলেন, “ওরা কথা বলবে! আমিও তো শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি।”
রেজিস্ট্রার তখন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “তোমাদের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাকে প্রতিটা দিনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে নাকি?” পাশে থাকা ফিশারিজ বিভাগের ডিন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মণ্ডলকে দেখিয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, “ডিন স্যার বাইরে ওয়েট করতেছিলেন, তুমি এর ভিতরে ঢুকেছ কেন?”
আম্মার তখন বলেন, “আমি ঢুকব না? আমি নির্বাচিত প্রতিনিধি। কেন ঢুকতে পারব না?” তখন রেজিস্ট্রার বলেন, “গেট আউট।” আম্মার পাল্টা বলেন, “কেন গেট আউট?” রেজিস্ট্রার আরও বলেন, “তুমি সবসময় মিথ্যাচার করো। এখানে বিএনপির কেউ নাই, তারা এনসিপির নেতাকর্মী।” তখন আম্মার বলেন, “আপনার সচিবকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি বলেছেন বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিটিং চলছে।”
রেজিস্ট্রার বলেন, “গেট আউট, আমার অফিসে আমার পারমিশন নিয়ে ঢুকতে হবে। এনারা (এনসিপির নেতাকর্মীরা) ১৫ দিন আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছে।”
আম্মার বলেন, “আমার শিক্ষার্থীদের অধিকার আগে, এটা ইমার্জেন্সি।” রেজিস্ট্রার বলেন, “অবশ্যই ইমার্জেন্সি, কিন্তু তোমাকে ওখানে বসতে বলেছি।”
এরপর এনসিপির এক নেতা বলেন, “আমরা বিএনপি’র কেউ না, আমরা এনসিপির নেতাকর্মী।”
ঘটনার বিষয়ে রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগে টানা ২৩ দিন ধরে চেয়ারম্যান অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চলছিল। গত বৃহস্পতিবার উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব ওই বিভাগের চেয়ারম্যানকে অপসারণের আদেশে স্বাক্ষর করে তা রেজিস্ট্রার দপ্তরে পাঠান। কিন্তু রবিবার পর্যন্ত চিঠিটি রেজিস্ট্রার দপ্তরে আটকে রাখা হয়।
বিষয়টি জানতে তিনি রেজিস্ট্রার অফিসে গেলে দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, ‘ভিতরে মহানগর বিএনপির প্রোগ্রাম চলছে, পরে আসুন।’ এরপর তিনি ভিতরে প্রবেশ করলে শুরু হয় বাগ্বিতণ্ডা।
অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, “ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির বিষয়ে আইনগত দিক বিবেচনা করে সকাল থেকেই কাজ চলছিল। ভিসি স্যার দুপুরে ফাইনাল অনুমোদন দেন। এরপর অফিসিয়াল প্রক্রিয়ায় সময় লেগেছে। আমি শিক্ষার্থীদের বলেছিলাম আজ পেলে ভালো, না হলে কাল পাবে। এর সঙ্গে আম্মারের আসা-যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।”
এনসিপির রাজশাহী মহানগর আহ্বায়ক মোবাস্বের রাজ বলেন, “আজকের ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণ কাকতালীয় ও বিব্রতকর। সালাহউদ্দিন আম্মার ও রেজিস্ট্রার স্যারের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের সময় বিএনপির কেউ সেখানে ছিল না। আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম, সেখানে রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতৃবৃন্দ সৌজন্য সাক্ষাতে এসেছিলেন। কিন্তু রেজিস্ট্রারের পিএস হয়তো ভুলবশত আমাদের বিএনপি ভাবায় ভুল বোঝাবুঝির সূত্রপাত হয়।”
ঘটনা নিয়ে সালাহউদ্দিন আম্মার ফেসবুকে বিস্তারিত লিখেছেন। তিনি জানান, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চলছে প্রায় ২৩ দিন। উপাচার্য বৃহস্পতিবার বিকেলে অপসারণপত্রে স্বাক্ষর করেন এবং সেটি রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো হয়। কিন্তু চিঠিটি রবিবার পর্যন্ত ইস্যু করা হয়নি।
তিনি বলেন, “রেজিস্ট্রার দপ্তরে রাজনৈতিক প্রোগ্রামের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশাসনিক বিষয় আটকে রাখা হয়েছে—এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
অন্যদিকে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ বলেন, “আমার দপ্তরে সবাই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসেন। ওইদিনও এনসিপির নেতাকর্মীরা এক সপ্তাহ আগে সময় চেয়েছিলেন। আম্মার বিনা অনুমতিতে ঢুকে পড়ে এবং উত্তেজনা সৃষ্টি করে। সে সবসময় মিথ্যা বলে ও নাটক করে। আমি তাকে শুধু বলেছি, অফিসে ঢোকার আগে পারমিশন নিতে হয়।”